ঢাকা | বঙ্গাব্দ

জ্বর হলে কী খাবেন

  • নিউজ প্রকাশের তারিখ : Sep 6, 2025 ইং
জ্বর হলে কী খাবেন ছবির ক্যাপশন:
ad728

আমাদের দেশে গ্রীষ্ম ও বর্ষাকাল একযোগে নানান প্রকার সংক্রামক জ্বরের মৌসুম। আর এখন চলছে বর্ষাকাল। বিশেষত চিকুনগুনিয়া, টাইফয়েড এবং সাধারণ ভাইরাল জ্বর এই সময়কালে উদ্বেগজনক হারে ছড়িয়ে পড়ে। 

World Health Organization (WHO)-এর তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণএশিয়ার জনবহুল দেশগুলোতে প্রতি বছর এসব জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হন এবং অনেকেরই দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক দুর্বলতা ও জটিলতা দেখা দেয়। 

চিকিৎসাব্যবস্থার পাশাপাশি শারীরিক প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি ও জ্বরজনিত দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে খাদ্যাভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

চিকুনগুনিয়া জ্বর : প্রদাহ হ্রাস ও পুনরুদ্ধারে পুষ্টির ভূমিকা

চিকুনগুনিয়া একটি আর্বোভাইরাল রোগ, যা Aedes aegypti ও Aedes albopictus মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এর লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় হঠাৎ উচ্চজ্বর, তীব্র অস্থি ও সন্ধির ব্যথা, র‌্যাশ ও ক্রনিক ক্লান্তি।

পুষ্টিকর খাবার ও পানিও :

পানি ও ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স : প্রতিদিন অন্তত 2.5–3 লিটার তরল গ্রহণ (ORS, ডাবের পানি, লবণ-চিনি পানি, চিরার পানি, মৌসুমি ফ্রেশ ফলের শরবত অবশ্যই বাসায় তৈরি)।

অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানগুলো :

আনারস ও পেঁপে-ব্রোমেলেইন ও প্যাপেইন নামক প্রাকৃতিক এনজাইম হাড় জয়েন্টের বা অস্থিসন্ধির ব্যথা হ্রাসে কার্যকর রসুন, হলুদ ও কালো গোল মরিচ-অ্যালিসিন, কার্কিউমিন ও পাইপেরিন ইনফ্ল্যামেটরি সাইটোকাইন কমাতে সহায়ক।

প্রোটিন ও ইমিউন সাপোর্ট :

সিদ্ধ ডিম, মাছ ও মুরগির ঝোল জ্বরের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কোষ, টিস্যু রিপেয়ার করে ও রোগ প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি সৃষ্টিতে সহায়ক।

ভিটামিন- C (পেয়ারা, আমলকি, লেবু, কাঁচা মরিচ, ভিটামিন- E (বাদাম), জিংক ও সেলেনিয়াম (ডিম, দুধ, দই, গরুর কিমার মাংস বা কলিজা)- অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রতিরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

টাইফয়েড জ্বর : অন্ত্রের স্বাস্থের জন্য পুষ্টিকর খাবার

টাইফয়েড একটি এন্টারিক ফিভার, যা Salmonella Typhi ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হয়। এর ফলে অন্ত্রে প্রদাহ, জ্বর, দুর্বলতা, ক্ষুধামান্দ্য এবং দীর্ঘস্থায়ী পুষ্টিহীনতা দেখা দেয়।

সহজপাচ্য উচ্চ ক্যালোরিযুক্ত খাবার :

ভাতের মাড়, সিদ্ধ ওটস, মিষ্টি আলু, সুজি, কলা, চাল মুগ ডালের নরম পাতলা খিচুরি অন্ত্রের ওপর চাপ না দিয়ে শক্তি জোগায়।

নিম্ন ফাইবার খাদ্য :

কাঁচা শাকসবজি, পেঁয়াজ, ছোলাজাতীয় খাবার সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা উচিত অন্ত্রের প্রদাহ কমাতে।

হালকা প্রোটিন :

ডিমের সাদা অংশ, ঝোলজাতীয় মাছ বা মুরগির সুপ সহজে হজম হয় এবং শরীর পুনর্গঠনে সাহায্য করে।

অ্যাডজাস্টেড হাইড্রেশন :

ডায়রিয়া-বমি থাকলে ORS-এর মাধ্যমে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের সঠিক মাত্রা বজায় রাখা জরুরি।

ভাইরাল Flue ও সাধারণ জ্বর : ইমিউনো-নিউট্রিশনের গুরুত্ব :

ভাইরাল ফ্লু সাধারণত ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, এডেনোভাইরাস বা করোনাভাইরাস দ্বারা সৃষ্ট। জ্বর, সর্দি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও ডায়রিয়া দেখা যায়।

ইমিউন বুস্টিং মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস :

ভিটামিন- C (পেয়ারা, লেবু), ভিটামিন- A (পাকা আম, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, মধু, কলিজা), জিংক (ডিম, আল্মন্ড বাদাম, মিষ্টি কুমড়ার বিচি, কালোজিরা)-রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কার্যকারিতা বাড়ায়।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড :

সামুদ্রিক মাছ, চিয়া সিড, আখরোট, কাঠবাদাম, ফ্ল্যাক্সসিড-ইনফ্ল্যামেশন ও সেল মেমব্রেনের সুস্থতায় স্থিতিশীলতায় ভীষণই প্রয়োজন।

প্রাকৃতিক ডিটক্স ও হোম রেমেডি :

মধু, আদা, কালোজিরা-এদের মধ্যে অ্যান্টিভাইরাল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ রয়েছে।

বর্তমানে করণীয় : পুষ্টি, পানি ও সচেতনতা।

নিরাপদ পানি নিশ্চিতকরণ :

টাইফয়েড ও ডায়রিয়ার ৭৫% সংক্রমণ দূষিত পানির কারণে হয়ে থাকে।

অসুস্থকালে সঠিক খাবার সরবরাহ :

সহজে হজমযোগ্য পুষ্টিকর খাবার যেমন সিদ্ধ ভাত অথবা নরম খিচুরি অথবা ওটসের পরিজ, মুরগির ঝোল বা চিকেন সুপ, ফ্রেশ ফলের শরবত ইত্যাদি।

স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি শিক্ষা :

স্কুল পর্যায়ে হাত ধোয়া, নিরাপদ রান্না ও পানির ব্যবহার নিয়ে প্রশিক্ষণ জরুরি।

পুষ্টি শিক্ষার অগ্রাধিকার : কমিউনিটি পর্যায়ে ইমিউনো-পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা।

পুষ্টিই হোক রোগ প্রতিরোধের প্রথম ধাপ। জ্বর কোনো সাধারণ সমস্যা নয়। এটি শারীরিক ও কোষীয় মাত্রায় বিপর্যয় তৈরি করে। তাই জ্বরের সময় শুধু ওষুধ নয়, সুনির্দিষ্ট পুষ্টিকর খাদ্য ও জলতলের ভারসাম্য রক্ষা করাও চিকিৎসার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। 

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ গ্রহণের সঙ্গে পুষ্টিবিদের পরামর্শে আপনার জন্য দরকারি সঠিক পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করলে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা যেমন সক্রিয় হয়, তেমনই রোগোত্তর জটিলতা ও দীর্ঘস্থায়ী দুর্বলতার ঝুঁকিও হ্রাস পায়।


নিউজটি পোস্ট করেছেন : নিজস্ব প্রতিবেদক

কমেন্ট বক্স